সময়,পরিবর্তন , বাঁধা , ব্যর্থতা ও সাফল্য- ‘সেই ছেলেটি আজকের এই সুমিত’

উপরের তিনটি শব্দ দেখে হয়তো মনে হচ্ছে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছি।আজকে এমনই একজন এর সম্পর্কে বলবো যার এই পর্যন্ত জীবনের পথচলায় এই শব্দ গুলো খুব বেশি সম্পৃক্ত।

নওগাঁর মত একটি মফস্বল শহরে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় একটি ছেলের যার নাম সুমিত কুন্ডু । বাবা-মার প্রথম সন্তান হওয়ায় রীতিমতো বেশ আদর যত্ন ভালোবাসায় বড় হয়ে উঠতে থাকে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও পারিবারিক শিক্ষা ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ । পড়াশোনা কিংবা স্কুল জীবনের শুরুটা হয় ২০১০ সালে প্রবাহ প্রি ক্যাডেট নার্সারি নামক একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বেবী শ্রেণীতে । পরিবারের কাছে অবাক করা বিষয় ছিল প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েই ছেলেটি যখন ক্লাস ওয়ান এ উঠবে তখন তার মেধাক্রম ছিল তৃতীয়তে । এবং যখন প্রথম শ্রেণীতে ছেলেটি উঠে তখন তার বাবা মা লক্ষ্য করে ছবি আঁকার প্রতি তার একটি বিশেষ ঝোক রয়েছে । সেই প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু হয় তার ছবি আঁকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা স্কুলেরই আর্ট টিচারের কাছে । তবে সে শেখা আর বেশিদিন শেখা হয়ে ওঠেনি সে সময় সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য এডমিশন পরীক্ষা দিতে হতো । রীতিমত তার বাবা মা তার এডমিশনের প্রিপারেশনের জন্য তার পিছনে খুব ভালোভাবে জোর দেয়। যার কারণে ২০১২ সাল পুরোটাই আর তার ছবি আঁকা শেখা হয়নি তবে সাফল্যের বিষয় এটি যে নওগাঁ তে থাকা দুটি সরকারি স্কুলের মধ্যে দুটিতেই সে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে ভর্তি হয় নওগাঁ জেলার তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় নওগাঁ কে.ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে । ভর্তি হয়েই আবারো তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণী থাকাকালীন পূর্বের আর্ট শিক্ষকের কাছেই তার ছবি আঁকা শেখা বহাল থাকে। কিন্তু তারপরেই পঞ্চম শ্রেণীতে ২০১৫ সাল তখন পিএসসি পরীক্ষা নামে একটি বোর্ড পরীক্ষা ছিল । এই বোর্ড পরীক্ষার প্রিপারেশন নেয়ার জন্য তার ছবি আঁকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একবারই বন্ধ হয়ে যায়। রীতিমতো পঞ্চম শ্রেণীতে বোর্ড পরীক্ষায়ও সে বেশ কৃতিত্বের সাথে ভালো রেজাল্ট করে। এভাবে শুধু পড়াশোনার মাঝেই আবদ্ধ হয়ে যায় সে । যখন সে ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন একদিন ট্রেনে করে একটা আত্মীয়র বাসায় যাওয়ার সময় তার মা তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন যে তোমার থেকে নিচে বা কষ্টে বা তোমার থেকে কম সুবিধায় যারা রয়েছে তাদের কথা ভাবতে সুযোগ হলে তাদেরকে সাহায্য করতে। এই কথাটি তার কাছে কিছুটা বেদবাক্যের মত লেগেছিল এবং চিন্তা করতে থাকে এর শুরুটা কিভাবে করা যায়।

অন্যরকম কোন কিছু করার সুযোগ যখন হয়ে উঠছিল না । ঠিক তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয় অন্যরকম কিছু করার জন্য স্কুলের স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্ট গ্রুপই ভালো মাধ্যম। রীতিমত অষ্টম শ্রেণীতে সে যোগ দেয় রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউটে । লক্ষনীয় বিষয় অল্প দিনে সে নেতৃত্ব প্রদানের এক দারুন সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু সে সময় 2018 সালে যখন সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে তখন আরো একটি বোর্ড পরীক্ষা ছিল যার নাম ছিল জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট। এই পরীক্ষায় সে বিগত দিনগুলোর মত ভালো ফলাফল করতে পারেনা। জিপিএ 5 এর মধ্যে সে জিপিএ ৪.৭৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। রীতিমতো বাসা থেকে এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা বলতে থাকে যে এসব স্কাউট হেনোতেন এইগুলোর জন্যই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। তবে এসব কিছুকে কানে না নিয়ে সে তার মত লেগেই থাকে স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্ট এর কাজে। এর মাঝেই ২০১৯ সালে আকস্মিক বন্যা নওগাঁর কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা যায় এবং রেড ক্রিসেন্ট থেকে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে রীতিমতো চলে যায় সে জলাবদ্ধ মানুষদের সাহায্যের জন্য।
এরপর ২০১৯ সাল ভালোভাবে কাটলেও ২০২০ এর মার্চ থেকে বাংলাদেশ এ করোনার ব্যাপক বিস্তারের জন্য যখন লকডাউন দেয়া হয় তখন তার কার্যক্রম কিছুটা শিথিল হলেও বেশ কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে আবারো নিরাপদ খাদ্য নিম্ন আয়ের মানুষের বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য বের হয়ে যায় সে। ২০২০ সাল এর পুরো সময়টাই তার এভাবে কাটলেও তার জীবনে এক অন্যরকম পরিবর্তন আনে ২০২০ এর ডিসেম্বর মাসে ।

ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ), জাতীয় পর্যায়ের একমাত্র শিশু সংগঠন যা শিশুদের দ্বারাই গঠিত, নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সে ন্যাশনাল চিলড্রেন্স টাস্ক ফোর্স এনসিটিএফ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারে এবং তার শাখা গুলো এবং কাজগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। অত্যন্ত দ্রুতই সে এনসিটিএফ নওগাঁর কার্যকরী কমটিতে দুই বছরের জন্য শিশু সাংবাদিক পদে নির্বাচিত হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। এনসিটিএফ নওগাঁ এর সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই তার জীবনের আরেকটা নতুন দার খুলে যায় । সে একজন স্বেচ্ছাসেবক থেকে সাংগঠনিক একজন মানুষে পরিণত হতে থাকে এবং যুক্ত হওয়ার পরপরই শিশুদের জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু প্রোগ্রামের আয়োজন করে। তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং লিডারশীপে বিশেষ নজর ছিল তার। পাশাপাশি নওগাঁর শিশুদের চাওয়া পাওয়া এবং তাদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে থাকে ।এনসিটিএফ নওগাঁর ফেসবুক পেজে প্রায় দিনই শিশুদের নিয়ে লেখা তার বিভিন্ন হেডলাইন বের হতো । তার কাছ থেকে জানা জানা যায় শিশুদের জন্য কাজ করতে গিয়ে সে দেখতে পাই অনেক শিশুই পড়াশোনা করতে পারছে না শুধুমাত্র অর্থের অভাবে ।এবং তাদের মধ্যে বেশ কিছু শিশু তারই পরিচিত ছিল। নিজ উদ্দেগে তাদেরকে পড়াশোনার সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়ার মত টাকাও তার কাছে ছিল না।

২০২১ সালে তার হাত দিয়ে শুরু হয় রংদার এর পথচলা ।বর্তমানে রংদার এর পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।

সে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চিন্তা ও কিছু জেদ থেকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে স্বাবলম্বী করার জন্য সে তখন অনলাইনে রংদার নামক একটি পেজ খুলে তার ছোট্ট একটি স্টার্টআপ শুরু করে। তার স্ট্যাটাসের প্রধান লক্ষ্য ছিল যে সে নিজেই নিজের হাত খরচ চালাবে ।সাংগঠনিক জায়গাগুলো যেখানে সে যুক্ত আছে সেখানে যে সদস্য চাঁদা রয়েছে তা সেখান থেকে প্রদান করবে । পরবর্তীতে যখন এই স্টার্টআপটি আরো বড় হবে তখন এখানে শুধু সুবিধাবঞ্চিতরায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে সেখানেই চাকরি করবে।তার তার এই রংদার নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করতেও অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সে যেহেতু ছবি আঁকা জানতো তাই চিন্তা করে রং তুলির উপরই কোনো বিজনেস করা যায় কিনা । কিন্তু ছবি আঁকা জানলেও সেসব মাধ্যমে ছবি আঁকা এবং সব রং সম্পর্কে ধারণা ছিল না কারণ তার প্রাতিষ্ঠানিক ছবি আঁকার সময় ছিল খুবই অল্প। সে সময় তার জেলা নওগাঁরই একজন শিক্ষার্থী পাশাপাশি সেও একজন উদ্যোক্তা জারিন তাসনিম নবনী। ফেসবুকে পেজ তৈরি করে হ্যান্ড পেইন্টেড বিভিন্ন ফ্যাশন প্রোডাক্ট শাড়ি পাঞ্জাবি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করতো সে। তখন তার কাছ থেকে অনলাইনে হ্যান্ড পেইন্ট ওয়ার্কশপের মাত্র তিন দিনের একটি কোর্স করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এবং তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমে পড়েন। শুরুতে ব্যবসার জন্য টাকা প্রয়োজন হলেও মাত্র ১৮০ টাকা দিয়ে তা যাত্রা শুরু হয় এবং বর্তমানে তার পেজে অনেক পণ্যের সমাহার।

বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজিত অনুষ্ঠান এ আমন্ত্রিত নওগাঁ আবৃত্তি পরিষদ এর আবৃত্তি প্রযোজনা: স্বাধীনতার রক্তপুরান।

এক পর্যায়ে তার এই সাংগঠনিক দক্ষতা দেখে ২০২১ সালে নওগাঁর সবথেকে বড় এবং প্রাচীন সাংস্কৃতিক সংগঠন আবৃত্তি পরিষদ নওগাঁ থেকে ডাক আসে তার জন্য। রীতিমতো সেখানেও তিনি যুক্ত হন এবং যুক্ত হয়েই তিনি বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চ অনুষ্ঠান করেছেন। আবৃত্তির দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করেছেন ।তার মাধ্যমে জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন অসুবিধার কথা। তার কাছ থেকে জানা যায় আবৃত্তি পরিষদের হাত ধরেই সে বিভিন্ন বড় বড় উৎসব করেছেন । আবৃত্তিতে তার জ্ঞান আংশিক থাকলেও পরিষদের মাধ্যমে সে এতে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হতে থাকে । সাংস্কৃতিক জগতে বিচরণনের ক্ষেত্রে তার প্রথম মঞ্চ প্রযোজনা ছিল বগুড়াতে প্রযোজনাটির নাম ছিল ‘স্বাধীনতার রক্ত পুরাণ’। এর পরেই তার নিজ জেলা নওগাঁতে ধারাবাহিকভাবে যতগুলো অনুষ্ঠান ছিল সেখানে রীতিমতো মঞ্চায়ন করেছেন বিভিন্ন প্রযোজনা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে স্বাচ্ছন্দ্য করে দলীয় প্রযোজনাতে।

বই বৃক্ষ নওগাঁ

আবৃত্তি পরিষদ ও এনসিটিএফ নওগাঁ এর পাশাপাশি তাকে কাজ করতে দেখা যায় বই বৃক্ষ নওগাঁ এর সাথে। বই নিয়েও তার যে বিশেষ ভালোলাগা রয়েছে তা প্রকাশ পেয়েছে বইবৃক্ষ নওগাঁ এর জন্য তার করা কাজ গুলো দেখে। এভাবেই ২০২১ সাল কেটে যায় এবং সেইসাথে করোনার প্রভাবের জন্য এসএসসি পরীক্ষা তাদের অনেকটা দেরিতে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে হয় এবং দুর্ভাগ্যক্রমে সেসময়েও সে জিপিএ ফাইভ এর মধ্যে জিপিএ ফাইভ পান না। তার এসএসসিতে পয়েন্ট আসে ৪.৭৯ ও এর মাধ্যমে আবার পারিবারিক এবং প্রতিবেশী কিছু মানুষের বাধা প্রাপ্ত হতে থাকে সে। যেহেতু স্কুল শেষ তাই তার সাথে সাথে রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউটিং এর ও ইতি ঘটে । তাকে বারবার বলা হয় এসব সাংগঠনিক কাজের জন্যই তার ফলাফলের এরকম অবস্থা।

ড্যাফোডিলস স্কুল নওগাঁ

তবে অবাক করা বিষয় শুধুমাত্র একটি বিষয়ের জন্য সে জিপিএ ফাইভ অর্জন করতে না পারলেও তার অর্জিত মার্ক ছিল অনেক। যার মাধ্যমে সে বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা কলেজ রাজশাহী কলেজে চান্স পেয়েছিল এবং একই সাথে ড্যাফোডিলস স্কুল নওগাঁতে সে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার হিসেবে নিয়োগ পায়। যার কারণে সে রাজশাহী কলেজে ভর্তি না হয়ে নওগাঁ তে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নওগাঁ সরকারি কলেজে শুরু হয় তার যাত্রাপথ। এবং যেহেতু সে একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে নিয়োগ পেয়েছিল তাই রীতিমত ক্লাস করাও তার জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে যেত । কিন্তু তার সাংগঠনিক কাজের এতটাই ব্যাপ্তি ছিল যে শুধুমাত্র প্রিন্সিপাল স্যারকে বলার সাথে সাথে স্যার নিজে থেকেই তাকে উৎসাহিত করেছে সেখানে জব করবার জন্য এবং তার জন্য ক্লাস সংখ্যাও শিথিল করা ছিল বিশেষ নিয়মে। ড্যাফোডিলস স্কুলে তার বিশেষ দায়িত্ব ছিল মূলত আর্ট টিচার হিসেবে এবং সেইসাথে প্রি ক্লাস নামক ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলার ছলে পড়া শেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২২ সাল পুরোটাই সেই ড্যাফোডিলস স্কুলে চাকরি করেছে এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বের সাথে সব কাজ সম্পন্ন করেছে।
২০২২ সালেই তার স্টার্টআপ নিয়ে এবং তারই মত আরও তিনজন মানুষ সে স্ট্যাটাস নিয়ে রীতিমত একটি নিউজ ও বের হয় হ্যালো বিডি ডটকম এর নিউজ পোর্টালে। নিউজটি বের হওয়ার সাথে সাথে তার কাজের গতি ও আরো বেড়ে গেল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত তার হাতে তৈরি পণ্য পৌঁছতে লাগলো ।
তার কাজ করার স্পৃহা এতটা বেশি থাকে যে সে সাইবার টিনস এও মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট টিম মেম্বার হিসেবে যুক্ত থাকে এবং 13 থেকে 19 বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের মেন্টাল হেলথ সম্পর্কে নানান কার্যক্রম করেছেন।

সভাপতি হিসেবে যোগদান করার পর এনসিটিএফ নওগাঁয়

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে এনসিটিএফ নওগাঁ জেলার শিশু সাংবাদিক পদের দায়িত্ব সমাপ্ত হয় এবং পুনরায় তিনি সভাপতি হিসেবে এনসিটিএফ নওগাঁতে যুক্ত থাকেন। সভাপতি হিসেবে যোগদান করার পর থেকে এনসিটিএফ নওগাঁর কাজের গতি আরো একধাপ এগিয়ে যায়। মাত্র ছয় মাসেই তারা বইমেলা এক্সপ্লোর ইয়োরসেলফ বিভিন্ন কনটেন্ট সহ সেক্সচুয়াল রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ নিয়েও বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম হন। প্রেসিডেন্টস কনফারেন্সে দেশের বাকি ৬৩ জেলার শিশু প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করার সুযোগ হয় তার।

প্রযোজনাঃ জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন

২০২৩ সালে তার সুযোগ হয় আবৃতি পরিষদ নওগাঁর কার্যনির্বাহী কমিটিতে কার্যকরী সদস্য হিসেবে যোগদান করার সুযোগ হয়  এবং যোগদানের পরেই ভারত বাংলাদেশ আয়োজিত গঙ্গা-যমুনা উৎসবেও সে একটি আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশ নেয়। অসীম কুমার মহন্ত এর গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় রচিত ছিল প্রযোজনাটি। প্রযোজনাটির নাম ছিল জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন। এই প্রযোজনাটি এর আগেও সে টানা দুইবার অংশগ্রহণ করে মঞ্চায়ন করে। প্রথম মঞ্চায়ন টি ছিল আবৃত্তি পরিষদ নওগাঁ এর ৩৫ বছর পূর্তি উৎসবে এবং দ্বিতীয় মঞ্চায়নটি ছিল স্রোত আবৃত্তি সংসদের তারা উৎসবে। প্রযোজনাটির মূল বক্তব্য ছিল বর্তমানে ঘটে যাওয়া সবথেকে নোংরা অপরাধ ভ্রুণ হত্যা নিয়ে।

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একক বিতর্ক ও তাৎক্ষণিক অভিনয় এ প্রথম স্থান অর্জন করায় নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ স্যার ও জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট হতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র অর্জন

এখানেই শেষ নয় তার প্রাপ্তির ধারা এতটা সমৃদ্ধ যে তিনি ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে তাৎক্ষণিক অভিনয় এবং একক বিতর্কে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে প্রথম তথা শ্রেষ্ঠ হন। ২০২৩ সালে ই তার এইচএসসি পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু এবারেও তার রেজাল্ট আশা অনুরূপ আবারো ছিল না তিনি মাত্র ৪.১৭ পেয়েছিলেন । তারপরই শুরু হয় তার ভর্তি যুদ্ধ এবং এই ভর্তি যুদ্ধের মধ্যেও তার কাছে আরো একটি সুসংবাদ আসে ভিএসও বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার ডে তে সে জেলা পর্যায়ে সেরা ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড এর জন্য নোমিনেশন পায় এবং সেখানে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন । ভর্তি যুদ্ধের মধ্যেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল না এবং তার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের মধ্যেই শিশু বিকাশ থেকে তার জন্য আরও একটি সুসংবাদ আসে সেখানে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ভর্তি যুদ্ধের প্রথম দিকে সে শুধু হতাশই হয়েছে। কোন ইউনিভার্সিটিতেই সে এডমিশন পরীক্ষায় সফল হচ্ছিল না। প্রথম থেকেই তার প্যাশন ছিল ছবি আঁকার প্রতি এবং তাই সে বেশি জোর দিয়ে শুধুমাত্র চারুকলাতে ভর্তি হওয়ার জন্যই প্রিপারেশন নিয়েছিল এবং ঢাবি জাবি রাবি চবি এর সবগুলোতেই চারুকলাতে পরীক্ষা দেয় সে। কিন্তু তিনটি জায়গাতেই ব্যর্থ হয় এবং যা দিতে অপেক্ষমান তালিকায় অনেক পেছনে তার সিরিয়াল থাকে। পরবর্তীতে সে রাজশাহী কলেজে মার্কেটিং ভর্তি হয়ে থাকে অপেক্ষমান তালিকার রেজাল্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত।

জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে আদিতি তে

রাজশাহী কলেজে ক্লাস চলাকালীন সে রাজশাহীতেও আদিতি নামক একটি ক্লথিং ব্র্যান্ড এ জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে নিয়োগ পায় ।সেখানে চাকরি রত থাকা অবস্থায় তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক আসে এবং মাত্র ১ মাস চাকরি করে সে চাকরি থেকে রিজাইন দেয় ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম আবর্তনের চারুকলা বিভাগের একাংশ

বর্তমানে সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম আবর্তনের চারুকলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী । বিশ্ববিদ্যালয় এর বন্ধুদের মাঝেও সে বেশ পরিচিত। এবং তার প্রত্যেকটি বন্ধুও খুবই সমৃদ্ধ । তার কাছ থেকে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি এর মহা যুদ্ধে তার পাশে সার্বক্ষণিক ছিল তার বাবা, মা ,মামা , মাসি তার বন্ধু আপন,সামিয়া ,নাবা এবং তার দুই পথ প্রদর্শক দিপু রায় ও নীল সরকার অসীম। এবং এনারা ছাড়াও অসংখ্য মানুষ ছিল তার পাশে যারা তাকে প্রতিটা ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে । তার কাছ থেকে জানা যায় তার সাংগঠনিক দক্ষতাই সব সময় তার কাছে ছিল তার কাছের কিছু মানুষ যাদের মধ্যে আল মামুন রূপস ,কারিশমা আক্তার কথা ,আনিকা বুশরা ,মনিরা আক্তার সরণি উল্লেখযোগ্য।এভাবেই সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন বিভিন্ন বাঁধা উপেক্ষা করে ব্যর্থতাকে শক্তি বানিয়ে সে সফল ।সে একসাথে লিডারশিপ কমিউনিকেশন ইভেন্টপ্ল্যানিং পাবলিক স্পিকিং টিম ম্যানেজমেন্টে ও মার্কেটিং এ পারদর্শী।
আজ সে ব্লাড ব্যাগ এর একজন রিজিওনাল ডেলিগেট হিসেবে কাজ করছেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *