মানুষের জীবন এর গল্প হতে মানুষ শিক্ষা নেয় আর এই শিক্ষা হল বাস্তবতার। বাস্তবতা কখনও মিথ্যা হয় না। এমনই এক বাস্তবতার গল্প জুবায়ের এর।
তার সম্পূর্ণ নাম মাহমুদুল হাসান জুবায়ের। জন্ম চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা নামক গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। এ জীবনী লিখা অব্দি তার বয়স ২৩ বছর। সে তার বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। তার শৈশবের পাঁচটি বছর কেটেছে গ্রামে সেখানে অনেক স্মৃতিময় দিন আছে, আছে গ্রামে কাটানো সে সময়ের কথা। এক সময় সে হাটতে শিখে যায়, আর পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সে খুব আদরের ছিল সবার। বিশেষ করে তার নানীর আদর-স্নেহ। সমবয়সীদের সাথে বিভিন্ন রকম খেলাধুলা, গাছ বাগানে ঘুরে বেড়ানো, গাছের বিভিন্ন রকম ফল খাওয়া, বাবা যখন বিদেশ হতে দেশে আসত তখন বাবার সাথে মসজিদে যাওয়া আর বাজারে ঘুরে বেড়ানো এবং তার কাছে সেসময় বিশেষ একটি মুহুর্ত হল বাবা যখন দোকান থেকে কিছু কিনে দিত তা নিয়ে গ্রামের সে ইটের তৈরি রাস্তা আর তার দুপাশে ধান এর চাষি জমির মধ্যে বাড়িতে মজা করতে করতে যাওয়ার আলাদা এক অনুভূতি।
তারপর গ্রাম হতে শহরে চলে আসে তার পরিবার। তার শিক্ষা জীবন এই চট্টগ্রাম শহরে শুরু হয় ২০০৭ সালে, নগরীর মেরন সান স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ। এখানে জীবনের এগারোটা বছর কাটিয়েছে অনেক সুখময় সৃতি আছে যা এখনও অনেক মনে পরে, আর যখন মনে পড়ে সেই স্কুল জীবনের সব দুষ্টু মিষ্টি সৃতিগুলো তখন তার অজান্তেই ঠোঁটের এক কোণে মুচকি হাসি আসে আর মন বলে “আহ্, এই দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারতাম”, যেখানে স্যার এবং ম্যাডামদের সেই দমক আর মায়াবী কন্ঠে উপদেশ দেওয়া তা শোনা, কম্পিউটার ক্লাসে বন্ধুদের সাথে শেষ সময় এসে টম এন্ড জেরি (টম আর জেরির ধর-পাকর), মিনা (মিনার শিক্ষামূলক, সামাজিক অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা), চার্লি চ্যাপলিন (চার্লি চ্যাপলিনের সেই উদ্ভট কর্মকান্ড) তা দেখার কি যে আনন্দ তা বলে বুঝানো যাবেনা। স্যারকে ওয়াশরুম এ যাওয়ার কথা বলে পুরো স্কুল ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরা ফেরা করা, এক বন্ধুর সাথে কলম ফাইট খেলি, সে বন্ধুই বলে তোর জ্ঞান কমে যাবে বলতে শোনা, নিজেদের বিশেষ কোড নাম ছিল যা দরে ডাক দেয়া। এরকম অনেক অনেক সৃতি আছে যা লেখা শুরু করলে আর শেষ হবে না। তারপর অনেক পাওয়া, না পাওয়ার মধ্য দিয়ে এই দিন এসে গেলো যখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার এগারোটা বছরের স্কুল জীবনের ইতি ঘটে গেলো। সেদিন স্যারদের সৃতি কাতর হয়ে বলা আদেশ-উপদেশগুলো এখনও মনে পরে, এটা জীবনের শেষ নয় বরং জীবনে সামনে আগাতে হলে অনেক কিছু পেছনে ফেলে আসতে হয় এবং অনেক কিছুর ইতি ঘটে তা সৃতি হয়ে থাকে। এটাই জীবন এর একটা অংশ। ২০১৮ তে এসএসসি পরীক্ষা পাশ করে।
এরপর কলেজ জীবন শুরু হয় ২০১৮ তে নগরীর সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ যেখানে জীবন এর একটা বছর কাটিয়েছি প্রসঙ্গত কারণে শেষ মেশ দিলোয়ারা জাহান মেমোরিয়াল কলেজ হতে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করে। এ সময়টা তার জীবনের একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পেজ ছিল, যা সামনে জীবনের পথ চলার জন্য তার কাছে অনেক বড় অবদান রেখেছে। এসময় অনেক কিছুই তার বিপরীতে থাকলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার অধম্য চেষ্টা সেসময় তাকে অনেক সাহায্য করে। থাক সেসব কথা এখন, শুধু এতটুকু বলব অ্যাগরেসিভ আর হুটহাট সিদ্ধান্ত না নেওয়া।
তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, এখানে আসার আগে একটু তার ছোট বেলা বা স্কুল লাইফ এ ফিরে যাওয়া যাক, সে টেকনোলজির বিষয়গুলো অনেক আগ্রহ নিয়ে দেখত আর ভাবত কি হচ্ছে আর কেমনে, কেন হচ্ছে। তারপর তার মামার কম্পিউটার এ তখন গ্রামীনফোনের ২জি মডেম এর ব্যবহার দেখে সে একসময় নিজেও ইন্টারনেট এর ব্যবহার শিখে ফেলে, তখন বাংলাদেশে শিক্ষিত সমাজের কাছে গুগল, জিমেইল, ফেইসবুক, স্কাইপ এর ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় হতে থাকে। সময়ে পরিবর্রতনের সাথে বিভিন্ন রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ব্যবহার দেখতে দেখতে বেড়েই চলে আর তা এখনও চলমান। সেসময় এই টেকনোলজির উত্থান হতে তার কাছে একসময় এই টেকনোলজির বিষয়গুলোর প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তুলে। তখন একটি কমন প্রশ্ন করত যে কেউ “তুমি কি হতে চাও বা হবে বড় হয়ে?” আর ইংরেজি ২য় পত্র এর “My Aim in Life” এদুটোর উত্তর যা সময়ের সাথে সাথে “সে বড় হয়ে কি হতে চাই?” ও “তার জীবনে লক্ষ্য” তার কাছে পরিষ্কার হতে থাকে। যা সে অষ্টম শ্রেণি হতে ঠিক করে পেলে, এর ফলে সে এইচএসসি পরীক্ষার শেষ এ ঠিক করে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ে বি.এস.সি করতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এ ভর্তি হবে এবং ২০২২ সালে ভর্তি হয়ে গেলো। সে এখন ঐখানে অধ্যয়নরত আছে। ঐখানেও জীবন তার নিজ গতিতে প্রতিনিয়ত অনেক গল্প তৈরি করছে। যা স্কুল ও কলেজ জীবন এর ন্যায় কোন একদিন লেখা হবে।
তার স্কুল জীবন থেকে এখন পর্যন্ত ছাত্র সংগঠন, ছাত্র আন্দোলন, সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বেশকিছু সংগঠন এর সাথে সম্পৃক্ততা আছে। তার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ব্লাডব্যাগ নামক একটি সংগঠন এর সাথে যুক্ত হয়েছে। এ সংগঠন এর সাথে সে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে মনুষ্যত্ব ও মানবতার দিক থেকে মানসিকভাবে শান্তিতে আছে। এ সংগঠন এর সাথে কাজ করার পেছনে তার বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব আছে যা তার নিজের ও খুব কাছের আপনজনদের সাথে ঘটে যাওয়া। রক্তের একজন ডোনার যে কি পরিমাণ প্রয়োজন কোন ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভবিষ্যতে ব্লাডব্যাগ ও এরকম সংগঠন এর সাথে সম্পৃক্ত থাকার আশাব্যক্ত করেছে। তার এতটুকু পথচলার পেছনে প্রথমত আল্লাহ্ সহায় ছিল এবং তার পরিবার এর অনেক বড় অবদান ছিল।
“পরিবার আমার সাথে সবসময়ই ছিল আছে আর থাকবে। আর আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষে নেমেছি আল্লাহ্ সহায় হোক। আমিন। সবাই আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। জীবনের সংক্ষিপ্ত কিছু মুহুর্ত বলার চেষ্টা করেছি এবং লিখেছে এই ব্লগ এর মধ্যে। ইনশাআল্লাহ যেদিন সফল হব, সে সফলতার পেছনে জীবনের প্রতিটা ছন্দের গল্প লিখে যাব। কারণ শুরতে বললাম, “মানুষের জীবন এর গল্প হতে মানুষ শিক্ষা নেয় আর এই শিক্ষা হল বাস্তবতার। বাস্তবতা কখনও মিথ্যা হয় না।” ধন্যবাদ। ” – মাহমুদুল হাসান জুবায়ের